অর্থমন্ত্রী বলেন,---- NEWS Feed, By Saym

Nurul Azam Saym
Analyst,Data.
CMRWD

শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বাজার সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সূচক ছয় হাজার ৩০০ পয়েন্ট, আর মূল্য অনুপাতে আয় (পিই) ২৩। বাজারের এ অবস্থা সহনশীল। স্থিতিশীলতার স্বার্থে এখন থেকে বাজারকে নিজের গতিতে চলতে দেয়ার কথাও জানান তিনি। তিনি বলেন, সবকিছুর পরও বিনিয়োগকারীদের সাবধান থাকতে হবে। অনেক বিনিয়োগকারী বোধহয় জানেন না তারা কত টাকার শেয়ার কিনছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া সবারই কর্তব্য।’৯৬-এর শেয়ার কেলেঙ্কারীর মামলার হাল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, এর কোনো সুরাহা করা যায়নি। কারণ, সাক্ষী নেই।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন শেয়ারবাজারে সুনির্দিষ্ট বিও একাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার বেচাকেনা করতে হয়। প্রত্যেক অ্যাকাউন্টধারীর পরিচয় ডিএসসি এবং এসইসি’র হাতে রয়েছে। ডিসেম্বরের ৫ তারিখে শেয়ারবাজারে যেদিন ডিএসসি’র সাধারণ সূচক এ যাবত্কালের সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্টে পৌঁছেছিল, সেদিন থেকে শুরু করে ২০ জানুয়ারি সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান ৬ হাজার ৩২৬ পয়েন্টের দিন পর্যন্ত দেড় মাসের মধ্যে কোন একাউন্ট থেকে কত টাকা তুলে নেয়া হয়েছে সেটা অনুসন্ধান করলেই টাকা সরিয়ে নেয়ার হিসাব পাওয়া যাবে।  
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৫ ডিসেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসসি) মূলধনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭১ কোটি ৪১ লাখ ৯৪ হাজার ৭০৬ টাকা। ২০ জানুয়ারি এটা কমে এসে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৬১১ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এ সময় মূলধন কমেছে ৮৪ হাজার ৪৬০ কোটি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে ৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০ জানুয়ারি এটা কমে এসে দাঁড়ায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ২০ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। এ সময় মূলধন কমেছে ৭৯ হাজার ৯০৪ কোটি ৭৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।
২০১১ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি ’৯৬-এর শেয়ার কেলেঙ্কারিকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। শেয়ারবাজার থেকে যাতে সিন্ডিকেট টাকা সরিয়ে নিতে না পারে তার দায়িত্ব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) থাকলেও তারা তা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এসইসি’র নানা সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। অন্যদিকে সরকারের অর্থমন্ত্রী, অর্থ উপদেষ্টাসহ নীতিনির্ধারকদের নানা মন্তব্য শেয়ারবাজারে নতুন করে আস্থাহীনতার সৃষ্টি করেছে। যদিও গত শুক্রবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বীকার করেছেন, শেয়ারবাজার নিয়ে তার এবং এসইসি’র সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। এগুলো শুধরানোর চেষ্টা করে বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা তিনি করবেন। প্রশ্ন উঠেছে, তাদের ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল কেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা দেবেন। এ অবস্থায় তাদের পদত্যাগেরও দাবি উঠেছে।
অতীতে শেয়ারবাজার কিংবা বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময় অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বাজার থেকে কত টাকা লোপাট হয়েছে বলে নিজস্ব পরিসংখ্যান নিয়ে হাজির হলেও এখন তিনি চুপ মেরেই আছেন। গত দু’দিন থেকে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে তার মোবাইল এবং বাসার ফোনে চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে মন্তব্য জানার জন্য তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ গতকাল ও শনিবার মন্তব্য করেছেন, শেয়ারবাজার থেকে সিন্ডিকেট অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, শেয়ারবাজারের লুটে নেয়া টাকা এর মধ্যেই বিদেশে পাচার হয়েছে।এবারের কেলেঙ্কারি আরও ভয়াবহ ও আধুনিক বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
এবারে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক উত্থান শুরু হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর জোরালো হতে থাকে। বলা হয়, তখন বাজারে প্রচুর কালোটাকা ঢুকতে থাকে। বাজার চাঙ্গা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিনিয়োগকারীরা দলে দলে আসতে থাকে। তখন সরকার ও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদেরসচেতন বা তাদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে বাজার বৃদ্ধির বাহবা নিতে থাকে। উপরন্তু ব্যাপক কারসাজির কারণে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে বলে অর্থনীতিবিদ বা বাজার অভিজ্ঞরা সতর্ক করলেও সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলে আসছিল, বাজার ১৯৯৬ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া শেয়ারবাজার বুঝতেন না আর বর্তমান অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেছেন দরপতন স্বাভাবিক ঘটনা : শেয়ারবাজার চাঙ্গা থাকায় তখনকার অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি স্থিতিশীলতার কথা বলে বাহবা নিলেও বাজার পড়তে শুরু করলে এর কোনো দায়িত্ব তিনি নেননি। এনিয়ে সংসদে আলোচনা হলে অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেন, শেয়ার মার্কেট কি, আমি বুঝি না। সূচক ৩ হাজার ৬৪৮ থেকে ১৫০০তে নেমে এলে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সূচক ১৫০০ হলে বাজার পড়া বলে না।’ আর এবারও শেয়ারবাজার চাঙ্গা হওয়ায় অর্থমন্ত্রী থেকে সরকারের শীর্ষব্যক্তিরা একে সরকারের সাফল্য বলে দাবি করেন। কিন্তু গত দেড় মাস ধরে শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতন হচ্ছে।

Courtesy:
AmarDeshOnline.coM